বড় ধরনের কোনো ক্ষতির মুখোমুখি আপনি? এ সময় কী করবেন? অধৈর্য হয়ে হতাশায় ভুগবেন, নাকি উঁচু গলায় চিল্লাচিল্লি করবেন কারও ওপর? না দুটির কোনোটিই করা যাবে না। বিপদে ধৈর্য ধরতে হবে। আর কোরআনই আপনাকে বলে দেবে কী করতে হবে। যদি কোরআন পড়তে না জেনে থাকেন; তাহলে কোনো মুমিন ব্যক্তির (যিনি কোরআনের ব্যাখ্যা দিতে জানেন) কাছ থেকে বিপদে পড়লে কোরআন কী বলে সেটি জেনে নিন।
আপনি কোরআনকে প্রশ্ন করুন, বিপদাপদ এলে আমার করণীয় কী? কোরআন বলবে, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন এবং সালাতে দাঁড়িয়ে যান। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
ধন-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, স্বজন হারানোর বেদনা বা যেকোনো বালা-মুসিবত—এগুলো তো মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুমিনের জীবনের ঈমানি পরীক্ষার অংশবিশেষ। এসব বিপদ আপদে বান্দা কি আল্লাহ তাআলাকে ভুলে যায় নাকি তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়ে; সেটাই তিনি দেখতে চান। যারা বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তারাই প্রকৃত সফলকাম এবং তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)
বিপদ আপদ বা বালা-মুসিবত এগুলো কখনো বলেকয়ে আসে না। সহসাই চলে আসে। তাই যখন যে অবস্থা আসুক না কেন? সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হা-হুতাশ করে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। কারণ প্রকৃত ধৈর্য বা সবর তো সেটাই, যেটা বিপদের প্রথম অবস্থায় হয়।
সহিহ বুখারিতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে—আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবী (সা.) এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি কবরের পাশে ক্রন্দন করছিলেন। নবী (সা.) বলেন, ‘তুমি আল্লাহকে ভয় করও এবং ধৈর্যধারণ করও।’ ওই নারী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে প্রস্থান করুন। আপনার ওপর তো আমার মতো বিপদ উপস্থিত হয়নি।’ তিনি নবী (সা.)-কে চিনতে পারেননি। পরে তাঁকে বলা হলো, তিনি তো নবী (সা.)। তখন তিনি নবী (সা.)-এর দরজায় উপস্থিত হলেন, তাঁর কাছে কোনো প্রহরী ছিল না। তিনি নিবেদন করলেন, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি বললেন, ‘ধৈর্য তো বিপদের প্রাথমিক অবস্থায়ই ধারণ করতে হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত ধৈর্য হচ্ছে বিপদের প্রথম ধাক্কায়ই ধৈর্যধারণ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯৮৭) মহান আল্লাহ আমাদের সব ধরনের বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করুন এবং নিতান্তই বিপদাপদ এসে গেলে সবর করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply