1. site@64bangla.tv : admin64bangla : হেড অব নিউজ
  2. ownreporter1@64bangla.tv : নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজস্ব প্রতিবেদক
কোম্পানীগঞ্জের অভিমানী কৃতী সন্তান এনায়েত উল্লাহ কাশেম - ৬৪ বাংলা টিভি
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন

কোম্পানীগঞ্জের অভিমানী কৃতী সন্তান এনায়েত উল্লাহ কাশেম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময়ঃ মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে
কোম্পানীগঞ্জের অভিমানী কৃতী সন্তান এনায়েত উল্লাহ কাশেম
কোম্পানীগঞ্জের অভিমানী কৃতী সন্তান এনায়েত উল্লাহ কাশেম

সৌদি আরবে প্রবাস জীবনের ৩৪ বছর পার করে এসে এখন ঢাকায় অবস্থান করছি। তাও প্রায় ৮ বছর অতিক্রান্ত হতে চললো। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগন্জের অনেক প্রবীণ রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী,শিল্পপতি, সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবীর সাক্ষাৎ মিলেছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। যদিও সময়ের ব্যবধানে ও বার্ধক্যের কারনে আমাদের রাজনৈতিক গুরুজনদের অনেককেই চিনতে বেশ হোঁচট খেতে হয়েছে। তথাপি যাদের সাক্ষাৎ পাওয়ার কথা ছিলো অবধারিত তাঁদের অন্যতম হলেন জনাব এনায়েত উল্লাহ কাশেম ভাই। জাসদ রাজনীতির সুবাদে তিনি আমার অগ্রজ বা গুরু হলেও তাঁর সাক্ষাৎ না পাওয়া ছিলো আমার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। ধারনা থেকেই আমি মনে করি কিছুটা রাজনৈতিক অনীহা বা আদর্শগত হতাশার কারনেই অভিমানী হয়েই নিজেকে আড়ালে থেকে জীবনাতিপাত করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

প্রবাদ আছে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ হলো রাজনীতির বীজতলা। জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব দানকারী অনেকেই এই স্বাধীন ভূখণ্ডে যশ-খ্যাতি নিয়েই জনগনের আস্থার প্রতীক হয়ে আছেন।‌ সেই পাকিস্তান আমলের প্রফেসর গোলাম ছারওয়ার সাহেব সারা পাকিস্তানের ছাত্র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এভাবেই পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে যারা রাজনীতির হাল ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ বিন্দুতে ছিলেন বা রয়েছেন তাঁদেরই অন্যতম ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, জনাব ওবায়দুল কাদের, জনাব আবু নাসের মোঃ আব্দুজ্জাহের এবং এমনকি স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব।

যাকে নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন, জনাব এনায়েত উল্লাহ কাশেম ভাই, ১৯৫১ সালে কোম্পানীগঞ্জের বামনী -তে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ টি এম ইসহাক কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শেষে ১৯৪৫ – ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কোলকাতায় স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। কাশেম ভাই কোম্পানীগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় গুরু/কামেল ব্যক্তিত্ব হাফেজ মিন্নত উল্লাহ সাহেবের নাতি।


বামনী হাই স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতিতে পদচারণা শুরু। ১৯৬৭ সালে নারায়নগঞ্জে তোলারাম কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৮ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আ স ম আবদুর রব এর ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন। তখন থেকে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত নিউক্লিয়াসের সংগে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণা কাজে তিনি ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ যখন অনিবার্য হয়ে ওঠে তখন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বিদায় আনতে ২৩ মার্চ বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়েন। ২৫ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্র‍্যাকডাউনের পর তিনি সতীর্থ, সাথীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রশীক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে তিনবার ভারত গমনে বিফল হয়ে ঢাকায় ফিরে যান। পরবর্তীতে নারায়নগঞ্জে রাজনৈতিক কর্মস্থল থেকে ৮ জনের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আগরতলায় গমন করেন। প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়ে ইছামতী ক্যাম্পে অবস্থানকালে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কোলকাতায় পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোলকাতায় থিয়েটার রোডে অবস্থিত মুজিবনগর ‘হেড কোয়ার্টার’ -এ মুক্তিযুদ্ধের দাপ্তরিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। এক্ষেত্রে নোয়াখালী জেলা থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য (এম এন এ) জনাব আবদুল মালেক উকিল ও জনাব মোহাম্মদ উল্লাহ সাহেব উনাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিজয় অর্জন তথা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের দুইদিন পর ১৮ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, ৩১ জানুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু সমীপে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্রসমর্পনের পর ছাত্র জীবন ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ফিরে যান। ১৯৭২ সালের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নারায়নগঞ্জের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট থাকার ফলে তিনি সিরাজুল আলম খানেরও প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনার কাঠামোগত ও নীতিগত বিষয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে প্রগতিশীল ছাত্র নেতাদের বৃহত্তম অংশের সাথে আওয়ামী লীগের মতপার্থক্যের ফলশ্রুতিতে ছাত্রলীগে বিভাজন হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর মেজর জলিল ও আ স ম আবদুর রব এর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল জাসদ গঠিত হয়। জনাব এনায়েত উল্লাহ কাশেম আলোচ্য রাজনৈতিক দল গঠনের প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। জাসদের উত্থানে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের রাজনীতিতে তিনি সমন্বয়কের দায়ীত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েমের মধ্যদিয়ে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে জাসদ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। এরপর কতিপয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার বদল ও সামরিক শাসন জারি ও পরবর্তীতে দেশের সেনাছাউনিতে অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনীতির গতিপথ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যার প্রভাবে জাসদ-ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাসদ রাজনীতির ঐ দুঃসময়ে ১৯৭৫-৭৬ থেকে ১৯৭৮ জনাব কাশেম ঢাকা মহানগর জাসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি ১৯৭৪-৭৫ থেকে ১৯৭৭-৭৮ পর্যন্ত তিনি নারায়নগঞ্জের জেলায় জাসদ রাজনীতির সাংগঠনিক কর্যক্রমের সমন্বয়কের দায়ীত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।


জাসদের এই দূর্দিনে আমরা ঢাকার রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে জনাব এনায়েতুল্লাহ কাশেম ভাইকে পেয়েছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি ও রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশের গ্যাস সেক্টরে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড -এ যোগদান করেন। আর আমিও ১৯৮৩ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমাই। তিনি বাখরাবাদ গ্যাস এর মহাব্যবস্থাপক / সচিব পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এল পি আর -এ গমন করেন। সেই থেকে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন।
হঠাৎ ফেইসবুকে সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু নিয়ে তাঁর দেয়া একটি স্টেটাস আমার নজরে আসে। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি তিনি দিল্লিতে চিকিৎসাধীন এবং তাঁর লিভার ট্র‍্যান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছে। দুর থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ হলেও দেখা হয়নি। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি জাসদের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদের বোনের সাথে সংসার বেঁধেছেন। তিনি এক মেয়ে ও দুই ছেলে অর্থাৎ তিন সন্তানের জনক। তাঁর সন্তানেরা ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলো এবং বর্তমানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।


আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতার পূর্বে ও পরের অনেক গুণীজনদের ইতোমধ্যে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। জনাব এনায়েত উল্লাহ কাশেম ভাইও বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন এই গুণী মানুষটির সততা কর্মতৎপরতা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ভূমিকা স্মরনীয় হয়ে থাকুক এবং মহান আল্লাহ পাক তাঁকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন এই কামনা করছি।

(হাফিজ ছিদ্দিকী ২২/০৩/২০২৪ ইং)

দয়া করে খবরটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© ৬৪বাংলা.টিভি, ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By Madina IT