সামরিক সক্ষমতায় বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ইসরাইলের চৌকস আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এরপর থেকেই কীভাবে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিলো হামাস, এত অস্ত্র পেলো কোথা থেকে, পৃষ্ঠপোষক কারা এসবই এখন আলোচনায়।
গাজা উপত্যকার দুদিকে ইসরাইল, একদিকে মিশর, আর অন্যদিকে ভূমধ্যসাগর। আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিশর সবসময় সীমান্ত কড়া পাহারায় রাখে; সাগরপথেও ব্যাপক নজরদারিতে থাকে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে অন্য কোনো পক্ষের যাওয়া-আসা অসম্ভবই বটে।
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর অঞ্চলটিতে নজরদারি আরও কঠোর করে ইসরাইল, যাতে বাইরে থেকে হামাসের হাতে কোনো অস্ত্র পৌঁছাতে না পারে। কিন্তু দুর্ভেদ্য সেই পাহারাও হার মানলো হামাসের কাছে।
অস্ত্রের যোগান পাওয়া নিয়ে বিবিসি, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নানা বিশ্লেষণে জানা যায়, অস্ত্র পাচারকারীরা ভূমধ্যসাগর উপকূলে অস্ত্র ফেলে যায়। তারপর সেগুলো সুযোগ বুঝে হামাসের কাছে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া মাটির নিচে থাকা সুড়ঙ্গ পথ দিয়েও হামাসের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেয় অস্ত্র চোরাকারবারীরা। গাজার সঙ্গে মিশরের যে সীমান্ত আছে মূলত সেই সীমান্ত ব্যবহার করে সুড়ঙ্গ পথে গাজায় অস্ত্র আসে।
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনবারের মতে, গাজা শহরের মাটির নিচে তাদের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর ছোট একটি অংশই কেবল ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরাইল। ২০০৭ সালে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর গত দেড় দশকে সুদীর্ঘ এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে হামাস। এসব সুড়ঙ্গ শহর ছাড়িয়ে ইসরাইলের সীমান্ত পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই ইসরাইলের মাটিতে এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে হামাস।
এনডিটিভির তথ্য বলছে, গাজা শহরের মাটির নিচে হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ককে ‘গাজা মেট্রো’ নাম দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এর আগে প্রকাশ্যে আসা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, সুড়ঙ্গগুলো সাধারণ হামাগুড়ি দিয়ে চলার মতো নয় বরং যথেষ্ট প্রশস্ত। এর ভেতরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্য গোপন নানা স্থান।
হামাসের এই রহস্যময় সুড়ঙ্গের বিষয়ে রিচম্যান ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার ড্যাফনি রিচমন্ড বারাক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘এগুলোর ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করা কিংবা টিকে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।’ তার মতে, হামাস নেতারা এসব সুড়ঙ্গের ভেতরেই অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা ও নেতৃত্ব দেন।
Leave a Reply