1. site@64bangla.tv : admin64bangla : হেড অব নিউজ
  2. ownreporter1@64bangla.tv : নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজস্ব প্রতিবেদক
সিন্ডিকেটের কবজায় মুরগি-ডিম দুটোই - ৬৪ বাংলা টিভি
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

সিন্ডিকেটের কবজায় মুরগি-ডিম দুটোই

আশিকুর রহমান
  • আপডেট সময়ঃ শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে
মুরগি-ডিম দুটোই এখন সিন্ডিকেটের কবজায়

পোল্ট্রি মুরগি ও ডিম উৎপাদনে খামারিদের নানাভাবে জিম্মি করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি- রপ্তানি এবং ডিলার পর্যায়ে সরবরাহ সবকিছুই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাজারে একক আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বহু খামারির কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে উৎপাদন করানো হচ্ছে। পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিম্মিদশা থেকে বের হতে না পারলে আরও বহু খামার বন্ধ হয়ে যাবে। ধস নামবে পোল্ট্রি খাতে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে ব্রলার মুরগির দাম আড়াইশ টাকার ওপরে ওঠে। চলতি আগষ্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফার্মের মুরগির সোনালী ডিম ৬৫-৭০ টাকা হালি হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বাজারে তৈরি হয় অস্থিরতা। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম আমদানির আভাসে নড়েচড়ে ওঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ১৩ আগষ্ট সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসে প্রান্তিক খামার পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় সাড়ে ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজার স্থিতিশীল রাখতে না পাড়ার দায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঘারে চাপিয়ে দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তার এক দিন পর ১৪ আগষ্ট বৈঠকে বসে ভোক্তা অধিকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতিটি ডিম ১২৩ টাকা করে বিক্রি করতে এবং পাকা ভাউচার রাখতে মাত্র দুই দিন সময় বেঁধে দেয় সংস্থাটি। এতে ক্রমেই ডিমের বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই ব্রলার মুরগি ও ডিমের বাজারের এমন উত্থান- পতনে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, পোল্ট্রি খাতের কলকাঠি আসলে কার হাতে? কোন অদৃশ্য শক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে খাতটি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ১ লাখ ৬০ হাজার খামার ছিল। করপোরেট কোম্পানিগুলোর কারসাজিতে লোকসান গুনতে গুনতে ১ লাখ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আবার বন্ধ খামারের মধ্যে ১৯ হাজারেরও বেশি খামারির কাছে থেকে ব্লাংক চেক নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে উৎপাদন করানো হচ্ছে। তাদের সঙ্গে নীলচাষীদের মতো আচরন করা হচ্ছে। অর্থাৎ মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, টিকা, ওষধসহ সবকিছু (প্যাকেজ) করপোরেট কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে ১১৯ টাকার মধ্যে উৎপাদন খরচ বেঁধে দিয়ে ১২৯-১৩০ টাকায় তারা কিনে নিচ্ছে। তারা পাইকারি পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি করে বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। নিজেরো ঠিকই লাভ করে আবার দাম কমিয়ে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের লোকসানে ফেলে দিচ্ছে। তাদের একচেটিয়া দাপটে প্রান্তিক খামারগুলো বন্ধ  হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে অসমতা, বাজারে নেই কোন প্রতিযোগিতা। তারা যখন- তখন কমিয়ে বা বাড়িয়ে অথবা দাম কমিয়ে- বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। এসব করে প্রান্তিক খামারিদের বাজার থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিজেরাই যখন বাজার দখল করবে, তখন মুরগি ও ডিমের বাজার আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে।

 তিনি বলেন, এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে মুরগির ডিম উৎপাদন; বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনসহ সরবরাহের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ; খাদ্যের দাম কমানোর মাধ্যমে মুরগি ও ডিম উৎপাদনে ব্যয় কমানো এবং বাচ্চা আমদানির অনুমতি দিতে হবে। সুমন হাওলাদার বলেন, এক কেজির ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে প্রান্তিক খামারিদের ব্যয় হয় ১৬৭ টাকা ও সোনালি মুরগিতে ২৫৯ টাকা এবং একটি ডিম উৎপাদনে ব্যয় হয় ১০ টাকা ৭৯ পয়সা। গত ৪ মাস ধরে মুরগিতে লোকসান হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা ও ডিমে ২ টাকা। আর করপোরেট কোম্পানিগুলোর মুরগিতে ব্যয় হয় ১৪০ টাকা ও প্রতিটি ডিমে সাড়ে ১০ টাকা। প্রান্তিক খামারি আজহারুল ইসলাম বলেন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদনে গেলে খামারিদের তেমন লাভ থাকে না। সবকিছুই নিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। মূলত আর্থিক সংকটে পড়ে এই চুক্তিতে যেতে হয়। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সাধারণ সম্পাদক ও প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, করপোরেট কোম্পানিগুলোর কারণে প্রান্তিক খামারিরা আবার পোল্ট্রি খাতে ফিরতে পারছে। কেননা তাদেরকে মুরগির বাচ্চা থেকে শুরু করে খাদ্য, ওষুধ, টিকাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যাংক যেমন ঋণ দেওয়ার সময় জমি বা অন্যান্য সম্পদ জামানত রাখে, করপোরেট কোম্পানিগুলোও তাদের পেছনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। সেক্ষেত্রে ব্ল্যাংক চেক রাখা দোষের কিছু নয়। তবে তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে সবকিছু নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার যে, সপ্তাহে এক দিনের বাচ্চা কতগুলো উৎপাদন করা হবে। খাদ্যের দাম কী হবে ইত্যাদি। তা না হলে জোগান ও ঘাটতির কারণে বাজারে এ অবস্থা চলতেই থাকবে। এদিকে একটি বাচ্চা উৎপাদনে ব্যয় হয় ৩০-৪০ টাকা। এটি ১ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়, এ কথা সত্য। প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য শতাধিক হ্যাচারি ছিল, বর্তমানে তা কমে ৩০টিতে নেমে এসেছে। লোকসান করতে করতে সবাই বন্ধ করে দিচ্ছে। সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয়। লেয়ার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় দুই লাখের মতো। ইচ্ছা করলেই এখানে কেউ সিন্ডিকেট করতে পারবে না। কেননা একটি বাচ্চাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাজারজাত করতে না পারলে সেটি মারা যাবে। তাই যারা করপোরেট কোম্পানিগুলোকে দোষারোপ করছে তারা না জেনেই করছে। আমরাও চাই এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। এজন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে যথাযথ দায়িত্ব নিতে হবে।

গত ২৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলন করে বিপিএ অভিযোগ করেছিল, বিএবি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সংগঠনভুক্ত চারটি করপোরেট কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদনে সীমা বেঁধে দিলেই ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। এ সম্পর্কে মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে অনেক পোল্ট্রি খামার আছে। ইচ্ছা করলেই কেউ সিন্ডিকেট করতে পারে না। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এ খাতটি টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের মাত্র ২০ শতাংশ পোল্ট্রি আছে। কীভাবে সিন্ডিকেট করব? এদিকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ ব্রয়লার মুরগির মাংসের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে গেলে কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে তলব করা হয়। তাদের সঙ্গে আলোচনার ফলে বাজার স্থিতিশীল হয়। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার স্থিতিশীলতার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গত বছরের ৬ আগস্ট ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগি ও চলতি আগস্টে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে বাজার অস্থিতিশীল হয়। সেখানে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও কিছু পদক্ষেপের কারণে বাজার স্থিতিশীল হয়। এজন্য অনেক অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। বিশেষ করে মার্চ মাসে অভিযানের ফলে মুরগির দাম এক দিনেই ৮০-৯০ টাকা কমে গিয়েছিল। আর এ বছর যেহেতু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খামারি পর্যায়ে সাড়ে ১০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে মোতাবেক কাজ করে বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। সবাইকে পর্যায়ক্রমে পাকা ভাউচার রাখতে বলা হয়েছে। আমরা আমাদের কাজ করছি, এখন বাকি কাজগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে করতে হবে। তিনি বলেন, ডিম ও মুরগির দাম কত হতে পারে তা নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর একটি স্টাডি করছে। এটি শেষ হলে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে। আর আমরাও দেখছি বর্তমানে খাদ্যের দাম ২০ টাকার বেশি নেওয়া হচ্ছে। এসব দাম কমিয়েও মুরগি ও ডিমের দাম কমানো যায়। তা ছাড়া আমরা বড় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে একেবারে খুচরা বাজার পর্যন্ত কাজ করছি। তবে লোকবল কম হওয়ায় অনেক কিছুই হয়তো সেভাবে হচ্ছে না। এখনও ১৭টি জেলায় পদ খালি রয়ে গেছে।

এ সম্পর্কে জানতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদারকে মোবাইলে কল করে পাওয়া যায়নি। পরে মুরগি ও ডিমের বাজার মূল্য নির্ধারণ ও উৎপাদন সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কী কাজ করছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক ডা. মো. শাহিনুর আলম বলেন, আসলে মুরগি ও ডিমের দাম কত হবে তা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে না। সেটি উৎপাদক ও ভোক্তার চাহিদার আলোকে দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে বাজারে যাতে যৌক্তিক দাম থাকে, সেজন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। কত দিনের মধ্যে সেটির কাজ শেষ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অতিরিক্ত উৎপাদন করে যাতে বাজার পড়ে না যায় এবং আবার খামারিরা লোকসানে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে কাজ করা হচ্ছে। খাদ্যের দাম সম্পর্কে জানতে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

দয়া করে খবরটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© ৬৪বাংলা.টিভি, ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By Madina IT